শুধু
শীতকাল নয়, শীত ছাড়াও প্রায় বছরই অনেকের পায়ের গোড়ালি ফাটে। পায়ের গোড়ালি ফাটার অনেক
কারন রয়েছে যেমন, সারা শরীরের পুরো চাপটা পড়ে পায়ের গোড়ালিতে, তাছাড়া রাস্তার
ধূলাবালি বা মাটির সংস্পর্শেও অনেকের গোড়ালি ফাটে। আবার অনেক সময় অযত্নের ফলেও এই সমস্যা
দেখা দেয়। গোড়ালি
ফাটা খুবই কষ্টকর। অনেকের ক্ষেত্র দেখা গেছে সময় সময় রক্ত পর্যন্ত পড়ে। এর পেছনে রয়েছে
সচেতন ভাবে পায়ের ত্বকের যত্নের অভাব। এই অভাব খুব সহজেই দূর করা যায়। আসুন জেনে নিই
পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণগুলো ও তার ঘরোয়া প্রতিকার।
পায়ের গোড়ালি ফাটার কারণ
- শরীরে ভিটামিন এর অভাব হলে পা ফেটে থাকে।
- ক্যালসিয়াম, জিংক ও আয়রনের ঘাটতি পা ফাটার অন্যতম কারণ।
- বয়স বাড়ার কারণে ত্বকের পরিবর্তনে।
- গোড়ালির ত্বক একটু মোটা।
- মানবদেহে জল কম হওয়ার কারণে পা ফাটতে দেখা যায়।
- খুব বেশি গরম জলে স্নান করলে।
- অতিরিক্ত ওজন হলে।
- পায়ে দীর্ঘ সময় কাদা-মাটি বা ধুলাবালি লেগে থাকলে।
- দীর্ঘক্ষণ ভেজা পরিবেশে বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় এ থাকলে।
- পায়ের যত্নের অভাব।
- অপরিচ্ছন্ন জুতো বা জুতোর সাইজ ঠিক না হলে।
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় যাদের।
- পুষ্টির অভাব।
- ডায়বেটিস রোগীদের স্নায়ুজনিত সমস্যার কারণে।
- থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, সোরিয়াসিস, একজিমা, ইত্যাদি কিছু রোগের কারণে হতে পারে।
- শুষ্ক জলবায়ু।
- নিষ্ক্রিয় ঘর্মগ্রন্থি।
- জেনেটিক বা বংশগত কারণে।
পায়ের গোড়ালি ফাটার প্রতিরোধে কিছু ঘরোয়া উপায়
পাঠক
বন্ধুকে বলব সমস্যা হওয়ার পর সচেতন হওয়ার চেয়ে আগে থেকে সচেতন হওয়াই ভালো। গোড়ালি
ফাটা সমস্যা থাকলে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়ায় সবচেয়ে ভালো। ঘরোয়া পদ্ধতিতে গোড়ালি
ফাটা প্রতিরোধের কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল –
নারকেল
তেল, বাদাম তেল, অলিভ অয়েল, তিলের
তেল,
সরষের
তেল
ইত্যাদি ভেজিটেবল অয়েল গোড়ালির ফাটা
অংশে লাগাতে পারেন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে। সারারাত পা ঢেকে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে সুতির
মোজা ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালোভেরায়
ভিটামিন এ, সি এবং ই থাকে। এই কারণে ত্বকের জন্য অ্যালোভেরার জেল খুবই কার্যকরী। হালকা
গরম জলে ভালকরে পা ধুয়ে, পা-ঘষার পাথর দিয়ে গোড়ালি ঘষে পরিষ্কার করে ভাল করে অ্যালোভেরা
জেল লাগান পায়ের গোড়ালি এবং তলায়। সারারাত সুতির মোজা দিয়ে পা ঢেকে রাখতে হবে। সকালে
উঠে হালকা গরম জলে পা ধুয়ে নিন।
এক
চা চামচ ভ্যাসলিন এর সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে ফাটা অংশে
সারা রাত পায়ে লাগিয়ে রাখুন। অবশ্যই রাতভর সুতির কাপড় দিয়ে পা ঢেকে রাখুন, কয়েকদিনেই
পায়ের গোড়ালি ফাটা দূর হবে ও পা নরম মশ্রিণ হয়ে যাবে।
লেবুর
রস গোড়ালির মৃত কোষগুলো তুলে ফেলে এবং পা ফাটা প্রতিরোধ করে। লেবুর রস পায়ে লাগিয়ে
১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ব্রাশ দিয়ে হালকা করে ঘষে মৃত কোষগুলো তুলে ফেলুন।
হালকা
গরম জলে তিন - চার চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। সেই মিশ্রণে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে
থাকুন। পায়ের ত্বক অনেক নমনীয় হবে। এরপর জল থেকে পা তুলে ব্রাশ দিয়ে হালকা করে ঘষে
প্যারাফিন
বা মোম আর সরিষার তেল একসাথে মিশিয়ে ফাটা জায়গায় লাগিয়ে রাখুন, ১০ মিনিট পর ভাল করে
ওয়াশ করতে হবে। পর পর ১০-১৫ দিন করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
পাঁকা
কলা চটকে পেস্ট তৈরী করে গোড়ালির ফাটা জায়গায় পুরু করে লাগিয়ে রাখুন, ১০ মিনিট পর
জল দিয়ে ধুঁয়ে ফেলুন।
ওটমিল
আর জোজোবা অয়েল এক সাথে মিশিয়ে এই মিক্সার দিয়ে ফুট স্ক্রাব করলে পায়ের ময়েশ্চারাইজার
ঠিক থাকবে। আর পা ফাটার ক্ষেত্রে এই মিশ্রনের ঘন পেস্ট তৈরি করে ফাটা জায়গায় লাগিয়ে
৩০ মিনিট রেখে জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে (১দিন পর পর করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়)।
মধু
পায়ের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। এক বালতি হালকা গরম জলে এক কাপ মধু মিশিয়ে নিন।
তারপর সেই মিশ্রণে দুই পা ডুবিয়ে রাখুন এবং হালকা ম্যাসাজ করতে থাকুন । তারপর পা-ঘষার
পাথর দিয়ে শক্ত চামড়া ঘষে পরিষ্কার করে দিন। এতে অনেক উপকার পাবেন।
বাজারে
দশকর্মার দোকানে এভোক্যাডো পাবেন, এর সাথে নারিকেল তেল এবং পাঁকা কলা ভাল করে মিশিয়ে
ঘন পেস্ট তৈরি করে পায়ের ফাটা জায়গায় লাগান। গোড়ালি ফাটা ঠেকাতে এই মিশ্রন খুবই উপকারী।
পায়ের গোড়ালি ফাটা কমাতে কিছু খাবার
পা
ফাটা চিকিৎসা আর প্রতিরোধে আপনার খাবারে রাখুন ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক এবং ওমেগা
৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই এবং মিনারেলস। নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সামুদ্রিক মাছ,
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।