বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সারে
নারীদের মৃত্যুর হার উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে সাধারণত ৫৫ বছরের
বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। শুনলে আশ্চর্য হবেন
মহিলাদের পাশাপাশি বর্তমানে পুরুষরাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, তবে তার সংখ্যা
অনেকটাই কম। এক হিসেবে দেখা গেছে যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ৪0 হাজার মহিলা স্তন ক্যান্সারে
আক্রান্ত হন, সেই তুলনায় মাত্র ৩০০ জন পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। তবে চিকিৎসকেরা
আশার কথা শুনিয়েছেন, গোড়াতেই ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সার ১০০ ভাগ নিরাময়যোগ্য।
স্তন ক্যান্সার কি?
চিকিৎসা
শাস্ত্র মতে স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো
অসম বিভাজনের মাধ্যমে টিউমারে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য
মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার।
স্তন ক্যানসার কেন হয়?
চিকিৎসকদের
মতে, নানা কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে।
- আমাদের বর্তমান জীবনে খাদ্যাভ্যাসের অনেক পরিবর্তন এসেছে, ফাস্টফুড অনেকটা জায়গা দখল করে ফেলেছে, সেটি একটি অন্যতম কারন।
- পরিবারে কারোর স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে হতে পারে।
- শিশু অথবা তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক তেজস্ক্রিয়/বিকিরণ রশ্মি দিয়ে চিকিৎসা করলে পরবর্তী জীবনে তার স্তন ক্যান্সারের বিকাশের সম্ভাবনা থাকে।
- মাত্রাতিরিক্ত ওজন (অথবা মোটা) স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। চর্বি ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন করে, যা ক্যান্সারের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
- ১২ বছর বয়স হওয়ার আগে ঋতুস্রাব হলে তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- দেরিতে মেনোপজ, ৫৫ বছর বয়সের পর যদি মেনোপজ হয়, তা স্তন ক্যান্সারের বিকাশ ঘটাতে পারে।
- দেরিতে গর্ভধারণ, ৩৫ বছরের পরে যদি কোনো মহিলা প্রথম সন্তান জন্ম দেয় তবে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো।
- অতিরিক্ত মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে, এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
- এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন বা হরমোনের ইনজেকশন নিচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
- ঋতুজরার লক্ষণ ও উপসর্গের জন্য যেসব মহিলা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনে মিলিত হরমোনের চিকিৎসা নেন, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
স্তন ক্যানসারের লক্ষণ বা উপসর্গ
- স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন
- স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন
- স্তনের ভেতরে পিণ্ড, গোটা অথবা স্তন পুরু হয়ে যাওয়া
- স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া
- স্তনবৃন্ত ভেতরে ঢুকে যাওয়া
- স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া
- স্তনবৃন্তের চারপাশে কালো অংশে চুলকানী
- স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া
- স্তনের উপরের ত্বকের পরিবর্তন হওয়া (যেমন: গর্ত হয়ে যাওয়া)
- স্তনবৃন্তের চামড়া কুচকে যায় অথবা চামড়া ওঠে যাওয়া
- স্তনের চামড়া লাল হয়ে যাওয়া
- বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললে
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো যায়
- শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষত, স্থূলতার সাথে স্তন ক্যান্সারের একটি যোগসূত্র রয়েছে।
- প্রত্যেক নারীরই প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্যায়াম অথবা যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত। কেননা এটা নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে অনেকাংশে মুক্ত রাখে।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। সবজি জাতীয় খাবার যেমন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ফলমূল ইত্যাদি খাবার বেশি খেতে হবে। এ ধরনের সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
- প্লাস্টিকের বক্সে খাবার রাখা এবং বিশেষত সেটিতেই ওভেনে গরম করা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিতে পারে। এর চেয়ে কাঁচের পাত্র ব্যবহার করুন। আর প্লাস্টিক ব্যবহার করতে চাইলে তা ফুড গ্রেড কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
- ঘামের দূর্গন্ধ এড়াতে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করেন প্রায় সবাই! কিন্তু এই ডিওডোরেন্ট কেনার সময় খেয়াল রাখুন কী কী উপাদান আছে এতে। এলুমিনাম বেসড উপাদান থাকলে তা স্তন ক্যান্সারের ঝুকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
- স্তনের আকার অনুযায়ী সঠিক মাপের ব্রা ব্যবহার না করা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। ঘরে থাকার সময় টুকুতে ব্রা ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন।
- অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
সবশেষে, স্তন ক্যান্সার কোনো লজ্জার বিষয় নয় বা কোনো গোপন রোগ নয়।
সমগ্র বিশ্বে প্রতি ৬ মিনিটে একজন নারী যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, সেটাকে লজ্জার
বা গোপন রোগ ভাববার আর কোনো কারন নেই। আমাদের সকলের সচেতনতাই পারে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ
করতে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।