আজকাল প্রায়শয় একটি সমস্যা খুবই দেখা যাচ্ছে মুখের ভেতর গালের ভেতর বা জিভে বা ঠোটের ভেতর ঘা। অনেকেই বারংবার এমন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন। মুখে বেশ বড় গর্ত নিয়ে ক্ষত বা ঘায়ের সৃষ্টি হওয়া, ব্যথায় মুখ নড়াচড়া না করতে পারা, ঝাল এবং নোনতা খাওয়া খুব মুশকিল বেশ যন্ত্রণাদায়ক। যদি এইরকম সমস্যায় প্রায়ই পড়েন তাহলে সেটি খুবই চিন্তার বিষয়। কারণ এ ক্ষত পরবর্তীতে বড় কোনো রোগ ডেকে আনতে পারে।
মুখের ভেতরের নরম চামড়া এবং ঝিল্লি আবরণ কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সাধারণত মুখে ছোট ছোট দানার মতো ঘা দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখাগেছে এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু বারবার মুখে ঘা হলে এবং তা না সারলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মুখে ঘা কেন হয় ?
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখাগেছে তীব্র পরিমাণে ভিটামিনের অভাব থাকলে মুখের ঘা হয়। যেমন ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১২ অথবা অন্য কোন ভিটামিন।
- গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের মুখে ঘা হতে পারে শারীরিক পরিবর্তনের জন্য।
- দাঁতের ও মাড়ির কোনো রোগ থাকলেও সেই জীবাণু দিয়ে মুখে ঘা হতে পারে।
- মুখের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ হলে মুখে ঘা হতে পারে।
- ধূমপান, পান, মদ ইত্যাদি নেশা জাতীয় জিনিস খেলেও মুখে ঘা হতে পারে।
- ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার এমন রোগ আছে তাদেরও অনেক সময় মুখে ঘা হতে পারে।
- মুখে অ্যালার্জি থাকলে ও ঘা হতে পারে।
- রাতে ঘুম না হলে অথবা দেরি করে ঘুমালে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে, অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করলেও মুখে ঘা হতে পারে।
- ঠাণ্ডা লাগলে মুখে ঘা হতে পারে।
- মুখের মাড়ি আঘাতগ্রস্ত হয়ে ও অনেক সময় এই ঘা হয়। জোরে জোরে দাঁত ব্রাশ করলেও এ ঘা হতে পারে।
- এছাড়া নিয়মিত সঠিকভাবে ব্রাশ না করলে, মুখের ভেতর অপরিচ্ছন্ন থাকলে, ঝাল-মশলা বা গরম খাবার বেশি খেলে মুখে ঘা হতে পারে। আবার অপরিস্কার ইনহেলার নিয়মিত ব্যবহার, স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ সেবন থেকেও মুখে ঘা হতে পারে।
মুখের ঘা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়
হলুদ
হলুদ গুঁড়ো নিয়ে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখের ভেতরে হওয়া ঘা-এ লাগান। দ্রুত উপকার পাবেন
যষ্টিমধু
যষ্টিমধু মুখের ঘা দূর করতে বেশ কার্যকরী। এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ জলে রাতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এই জল দিয়ে ভালকরে কুলি করুন।
টি ব্যাগ
দ্রুত ব্যথা এবং ইনফ্লামেশন দূর করে টি ব্যাগ। একটি টি ব্যাগ ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে সেটি ঘায়ের স্থানে লাগান। ব্যথা এবং ঘা দুই কমে যাবে।
ধনে পাতা
ধনে পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করুন। দিনে কয়েকবার করে করলে আরাম পাবেন।
নারকেল দুধ
এক টেবিল চামচ নারকেল দুধের সঙ্গে মধু ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রনটি ঘায়ের স্থানে লাগিয়ে রাখুন। দিনে তিন থেকে চারবার ব্যবহার করুন।
তুলসি
তুলসির পাতায় অনেক ঔষধি গুণ। মুখে ঘা হলে কয়েকটি তুলসির পাতা চিবিয়ে নিন। তুলসি পাতার রসে ঘা সেরে যাবে। অথবা কয়েকটি তুলসি পাতাসহ জল দিনে তিন থেকে চারবার পান করতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক যার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফিংগাল, অ্যান্টিভাইরাল উপাদান আছে যা ক্ষতও কমিয়ে দিতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল বা জুস মুখের ঘা কমাতে সক্ষম।
টুথপেস্ট
টুথপেস্টের মধ্যে রয়েছে জীবাণুনাশক অনেক উপাদান। এছাড়া, এর মধ্যে রয়েছে কুলিং মিন্ট। যা ব্যথায় আরাম দেয়।
ঘায়ের ব্যথা বেশি হলে উপসমের জন্য এক টুকরা বরফ নিয়ে ঘায়ের স্থানে রাখুন। অথবা ঠাণ্ডা জল দিয়ে কুলিকুচি করুন।
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: এই নিবন্ধের জন্য কোনোভাবেই মুক্তাঙ্গন দায়ী নয়। ওপরে বলা তথ্য মেনে চলার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।