মশার কামড়ে বিরক্ত হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সন্ধ্যা নামতেই ঘরে ঢুকে পড়ছে মশা। মশার জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন তো আপনি। মশার কামড় থেকে মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস মতো মারণ রোগ। মশা তাড়ানো ধুপ, কয়েল, রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করে অনেক সময় মশার উপদ্রব কমলেও এইসব রাসায়নিক পদার্থ গুলি শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। তাই আজকাল অনেকেই বাজার চলিত এই সমস্ত রাসায়নিক পণ্য গুলি ব্যবহার করতে চাইছেন না, আসুন দেখেনি একদম ঘরোয়া উপায়ে মশা তাড়ানোর 10টি পদ্ধতি।
নিম পাতা ও নিম তেল
নিমের ঔষধি গুণাগুণের কথা জানে না এমন মানুষ পাওয়া বিরল। নিপ পাতা ভাল করে রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে নিন। সন্ধ্যায় ঘরে ধুনোর সঙ্গে গুড়ো নিম পাতা ছড়িয়ে দিন নিমের ধোঁয়ায় ঘরের মশা-মাছি পালিয়ে যাবে।
নিমের তেল মানব ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এ ছাড়াও নিম তেলে রয়েছে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ। মশার কামড় থেকে বাঁচতে নিমের তেল ও নারিকেল তেল সমপরিমাণ মিশিয়ে হাত-পায়ের চামড়ায় লাগিয়ে রাখতে পারবেন।
লেবু ও লবঙ্গ
লেবু আধা-আধি গোল করে কেটে ভেতরে অনেকগুলো লবঙ্গ গেঁথে দিতে হবে। লেবুর মধ্যে লবঙ্গ এমন ভাবে ঢোকাতে হবে যাতে লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ (ফুল) বাইরে থাকে। এরপর লেবুর টুকরাগুলো একটি পাত্রে করে ঘরের কোনায় রেখে দিন। এতে বেশ কিছু দিন মশার উপদ্রব কমবে। চাইলে এগুলিকে জানালা এবং দরজার পাশে রাখতে পারেন (যে সব জায়গা দিয়ে মশা ঘরে ঢোকে)। এতে মশা আর ঘরে ঢুকবে না।
কর্পূর
কর্পূরের উগ্র গন্ধ মশা সহ অনেক পতঙ্গ একদমই সহ্য করতে পারে না। তাই মশা তাড়াতেও ভাল কাজ করে কর্পূর । ঘরের সমস্ত সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে একটি পাত্রে এক টুকরো কর্পূর জ্বালাতে হবে। প্রায় 20 - 30 মিনিট পর দরজা-জানালা খুলে দিন, দেখবেন সমস্ত মশা চলে গেছে।
তাছাড়া বাটিতে জল নিয়ে ঐ জলের মধ্যে কর্পূররে বড়ি দিয়ে ঘরের কোনায় কোনায় রাখুন, দেখবেন কর্পূরের গন্ধে ঘরে আর মশা আসবে না। এটি একটি সাশ্রয়ী প্রতিকার।
পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা কিন্তু মশা তাড়াতেও সমান কার্যকরী। একটি গ্লাসে কিছুটা জল নিয়ে তাতে পাঁচ থেকে ছয় গাছি পুদিনাপাতার ডাল দিয়ে ঘরের টেবিলে রেখে দিন । দুই-তিন দিন অন্তর গ্লাসের জল পরিবর্তন করলে ভালো হয়। মশা সহ অনেক পোকামাকড় পুদিনার গন্ধ সহ্য করতে পারে না, ফলে অনেক ধরনেরই পোকামাকড় ঘরে আসে না। এছাড়া কিছুটা পুদিনাপাতা মিক্সি করে জলে ভালো করে ফুটিয়ে সেই জল ঘরে ছড়িয়ে বা স্প্রে করে দিতে পারেন। এতেও ঘরে মশার উপদ্রব কমবে।
ন্যাপথলিন
কর্পূরের মত ন্যাপথলিনের উগ্র গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। তাই মশা তাড়াতে ন্যাপথলিন ব্যবহার করা হয় । ছোট ছোট বোতলের মধ্যে 2-3 টি ন্যাপথলিন দিয়ে বোতলের মুখ খুলে ঘরের কোনায় কোনায় রেখে দিন, দেখবেন মশা অনেকটাই কমেগেছে। প্রসঙ্গত বলি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আমাদের অফিসে মশার উপদ্রব অনেকটাই কমেছে।
চা পাতা
ঘরোয়া পদ্ধতিতে মশা তাড়ানোর সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো চা পাতা। বাড়িতে চা করার পর ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে তা ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো চা পাতা পোড়ানোর ধোঁয়ায় মশা-মাছি ঘর থেকে পালিয়ে যাবে।
রসুন
রসুনের উগ্র গন্ধ পোকামাকড় এবং মশা-মাছি অপছন্দ করে। অতিরিক্ত রসুনের রস মশার জন্য প্রাণঘাতী। পাঁচ ভাগ জলে এক ভাগ রসুনের রস অথবা 4-5 কোয়া রসুন ভালো করে থেঁতো করে কিছুটা জলে মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে. একটি স্প্রে বোতলে দ্রবণটি ছেকে ভরে সারা ঘরে স্প্রে করে দিতে পারেন। বা শরীরের যেসব স্থানে মশা কামড়াতে পারে, সেসব স্থানে স্প্রে করতে পারেন।
লেমন গ্রাস
লেমন গ্রাসের একটা সুন্দর গন্ধ আছে, কিন্তু এই গন্ধ মশাদের একদমই অপছন্দ। বাড়ির আশপাশে লেমন গ্রাসের ঝাড় রাখতে পারেন। তাছাড়া লেমন গ্রাস দেখতেও মন্দ নয়। টবে লেমন গ্রাস লাগিয়ে সেটিকে সুন্দর করে কেটে-ছেটে ঘরেও রাখতে পারেন। দেখবেন ঘরে মশা একদমই থাকবে না।
সুগন্ধি ব্যবহার
রাতে ঘুমানোর আগে শরীরে খোলা জায়গায় আতর, পারফিউম বা সুগন্ধি লোশন মাখলে মশা আপনার কাছে কম যাবে। কারন মশারা কোনরকম গন্ধ পছন্দ করে না।
গাঢ় রঙ
সবশেষে বলব খয়েরী, লাল, কালো, নীল এত্যাদি গাঢ় রঙের প্রতি মশা আকৃষ্ট হয়। মশা গরমের প্রতিও সংবেদনশীল। তাই ঘর ঠান্ডা রাখুন, ঘরের দেওয়ালের রঙ হালকা রাখুন আর পোশাক ও পড়ুন হালকা রঙের।
পরিশেষে বলব, বাড়ির আশেপাশে নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার রাখুন, কোথাও জল জমতে দেবেন না। এ.সি. ফ্রিজ ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা পরিষ্কার রাখুন, যাতে দীর্ঘদিন জল না জমে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।