পৃষ্ঠা

চুলপড়ার হাত থেকে বাঁচতে জেনেনিন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি


hair fall


মানুষের হাতের তালু, পায়ের পাতার তলা, চোখের পাতা, পেটের নাভির মতন জায়গাগুলি ছাড়া সর্বত্র লোম বা কেশ ছড়িয়ে আছে যার অনেকগুলি এত সুক্ষ যা কার্যত প্রায় অদৃশ্য আবার মাথার চুল মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের সৌন্দর্য অনেকগুন বাড়িয়ে, দেয় ঘন কালো সুন্দর চুলের অধিকারী মানুষগুেলা সবসময় আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
চুলগুলি কেরাটিন নামক একটি প্রোটিন দিয়ে গঠিত যা ত্বকের বাইরের স্তরে চুলের ফলিকিতে তৈরী হয়। ফলিকেলগুলি যেমন নতুন চুলের কোষ তৈরি করে এবং পুরাতন কোষগুলি ত্বকের বাইরে বের করে দেয়। প্রতিটি সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের বছরে প্রায় ছয় ইঞ্চি হারে চুল বা কেশ বৃদ্ধি হয়। যে চুল আমরা দেখতে পাই তা আসলে মরা কেরাটিন কোষগুলির একটি স্ট্রিং। গড়ে প্রাপ্ত বয়স্কের মাথার প্রায় 100,000 থেকে 150,000 কেশ থাকে এবং তাদের মধ্যে প্রতিদিন কোন না কোন কারনে 100 টি ঝরে পড়ে।





যে কোনও সময়ে, কোনও ব্যক্তির মাথার চুলের প্রায় 90% চুল বাড়ছে। প্রতিটি ফলিকের নিজস্ব জীবনচক্র থাকে যা বয়স, রোগ এবং বিভিন্ন কারণের দ্বারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবিত হতে পারে। এই জীবনচক্রটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:

অ্যানেজেন - সক্রিয় চুলের বৃদ্ধি,  এই চুলগুলি সাধারণত দুই থেকে আট বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

ক্যাটেজেন - সংক্রামক চুলের বৃদ্ধি যা দুই থেকে তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়।

টেলোজেন - বিশ্রামের পর্ব যা প্রায় দুই থেকে তিন মাস স্থায়ী হয়; বিশ্রামের পর্যায়ে শেষে চুলগুলি পড়ে যায় এবং একটি নতুন চুল আগের চুলটি প্রতিস্থাপন করে, এবং ক্রমবর্ধমান চক্রটি আবার শুরু হয়।


মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের চুলের বৃদ্ধির হার মন্থর হতে থাকে । কারন হিসেবে চুল পড়া অনেক ধরণের হয়, একে অ্যালোপেসিয়া বলা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকটি নীচে উল্লেখ করলাম --

ইনভোলশনাল অ্যালোপেসিয়া (Involutional alopecia), অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া (Androgenic alopecia), অ্যালোপেসিয়া আরেটা (Alopecia areata), অ্যালোপেসিয়া ইউনিভার্সালিস (Alopecia universalis), ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া টেলোজেন (TrichotillomaniaTelogen), এফ্লুভিয়াম (effluvium), স্কারিং অ্যালোপেসিয়াস (Scarring alopecias) ইত্যাদি




চুলের যত্ন কিভাবে নেবেন ?


শ্যাম্পু


আপনার মাথার ত্বক এবং চুলের সঙ্গে সামঞ্জোস্যপূর্ণ সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এছাড়াও, আপনার মাথার ত্বকের উপর নির্ভর করে সপ্তাহে কতবার চুল ধোয়া দরকার। উদাহরণস্বরূপ, শুকনো মাথার ত্বকে ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল বেশি পড়তে পারে, আবার সপ্তাহে তিনবার তৈলাক্ত লকগুলি না ধুয়ে ফেললে চুল পরার পরিমানও বেড়ে যেতে পারে।

কন্ডিশনার

একটি ভাল কন্ডিশনার চুলের লকগুলির জন্য আশ্চর্য কাজ করতে পারে। এতে অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা ক্ষতিগ্রস্থ চুলগুলি মেরামত করতে সাহায্য করে এবং চুলকে মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।





চুল পড়ার হাতথেকে রক্ষা পেতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি


অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী

অ্যালোভেরা চুলের বিভিন্ন সমস্যা এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী একটি ঘরোয়া পদ্ধতি। এটি চুলকানির মতো সমস্যা কমাতেও খুবই কার্যকর।



ব্যবহার করার পদ্ধতি

1. পরিষ্কার একটি অ্যালোভেরার ডাঁটা নিন এবং আস্তে আস্তে ভেতরের মজ্জাটি বের করুন।
2. এটি আপনার চুল এবং মাথার ত্বকে লাগিয়ে প্রায় 45 মিনিটের জন্য রেখে দিন।
3. সাধারণ জলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন থেকে চারবার অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।



আমলকি

চুল পড়া বন্ধে আমলকি খুবই কার্যকরি একটি ঘরোয়া পদ্ধতি। আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে, তাই আমলকি খেলে চুলের ফলিকেলগুলিকে মজবুত হয় ফলে চুলপড়ার হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়াও আমলা চুলের দ্রুত বিকাশের সহায়তা করে এবং স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বক বজায় রাখে ।



আমলকি ব্যবহারের পদ্ধতি

1. কিছুটা চুনের ওপরে থাকা স্বচ্ছ জলের মধ্যে  আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
2. পেস্টটি মাথার ত্বকে ভালভাবে লাগিয়ে এবং চুলে ম্যাসাজ করুন।
3. এক ঘন্টা রাখুন এবং তারপরে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।






ডিম প্যাক

ডিমের মধ্যে প্রচুর পরিমানে সালফার, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, আয়োডিন, দস্তা এবং প্রোটিন থাকে, যেগুলি চুলকে সাস্থ্য সম্মত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।


প্যাক প্রস্তুত করার পদ্ধতি

1. একটি বাটিতে একটি ডিমের সাদা অংশকে আলাদা করে তাতে এক চামচ জলপাইয়ের তেল ও এক চামচ মধু  যোগ করতে হবে।
2. মিশ্রনটিকে ভালভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে।
3. পেস্টটিকে মাথার ত্বকে ভালভাবে মাখতে হবে।
4. 20 মিনিটের পরে শ্যাম্পু দিয়ে  মাথা ধুয়ে ফেলুন।


গ্রীন টি বা সবুজ চা

এই চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে এবং চুল ক্ষতি রোধে সহায়তা করে।



কিভাবে ব্যবহার করবেন ?

1. আপনার চুলের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে এক থেকে দুই কাপ গরম জলে দুই-তিনটি টিব্যাগ ভিজিয়ে রাখুন।
2. এটি ঠান্ডা হয়ে গেলে মাথার ত্বক এবং চুলের উপরে আস্তে আস্তে ঢালুন, এবং আলতো করে মাথাটি ম্যাসাজ করুন।
3.এক ঘন্টা পরে ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।





যষ্টিমধু


যষ্টিমধু হচ্ছে গ্লাইসাইররিজা গ্লাবরা গাছের শিকড়। এই ভেষজ চুল পড়া এবং চুলের অন্যান্য সমস্যা গুলিকে রোধ করে। এটি মাথার ত্বককে ঠান্ডা করতে এবং মরামাশ বা খুশকি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।



কিভাবে যষ্টিমধু ব্যবহার করবেন ?

1. এক কাপ দুধে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু চূর্ণ এবং এক চতুর্থাংশ চামচ জাফরান মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
2. মাথার ত্বকে এবং চুলের মধ্যে ভালকরে মাখতে হবে এবং সারারাত রেখে দিন।
3. পরের দিন সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন।
4. সপ্তাহে দু'বার এটি মাথায় লাগানো যেতে পারে।



নারকেলের দুধ
 
নারকেলে থাকা প্রোটিন এবং ফ্যাট চুলের বৃদ্ধির ঘটায় এবং চুল পড়া রোধ করে।


দুধ প্রস্তুত করার পদ্ধতি

1. একটি মাঝারি সাইজের নারকেল কুড়িয়ে সামান্য জল দিয়ে একটি পাত্রে নিয়ে পাঁচ মিনিট সিদ্ধ করুন।
2. এটিকে ঠান্ডা করে পরীষ্কার কাপড়ের মধ্যে নিয়ে চাপ দিয়ে দুধ বার করতে হবে।
3. এই দুধে  এক চামচ গোলমরিচ চূর্ণ এবং মেথি বীজের চূর্ণ  যোগ করুন।
4. মিশ্রনটিকে ভালভাবে মিশিয়ে মাথার ত্বকে এবং চুলে প্রয়োগ করুন।
5. 20 মিনিটের পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।