পৃষ্ঠা

বেশি মোটা বা স্থূলতা কেন হয় ? স্থূলতার বিভিন্ন সমস্যা ? এবং প্রতিকার জেনেনিন বিস্তারিত



fat


সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তুলনামূলকভাবে আগের তুলনায় মানুষের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সমাজে স্থূলকায় বা মোটা  মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েগেছে । বর্তমানে 20 বছর বা তার বেশি বয়সের ভারতীয়দের মধ্যে প্রায় 60 শতাংশ মানুষের ওজন বেশি। এবং এর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশকে স্থূল বলে মনে করা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, সমস্যাটি শিশুদের মধ্যেও অনেক বেশি পরিমানে দেখা যাচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, 6 থেকে 19 বছর বয়সী শিশুদের 17 শতাংশ স্থূলকায় এবং 2 থেকে 5 বছর বয়সী শিশুদের 10 শতাংশ শিশু স্থূলকায় এটি যথেষ্ট উদ্বেগের কারন ।

অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলত্বের মধ্যে পার্থক্য কী ?

 
"ওজন বেশি" বা "স্থূলত্ব" উভয় শরীরে বেশি মেদ (চর্বি) জমার কারন। শব্দ দু'টিই মোটা লোকদের জন্য ব্যবহৃত হয়, যাদের শরীরে বেশী চর্বিযুক্ত হওয়া কারনে নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যায় রয়েছে। তবে, "স্থূলকায়" শব্দটি ব্যবহার করা হয় সাধারণত "অতিরিক্ত ওজন"এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে শরীরের ফ্যাট থাকে তাদের ক্ষেত্রে।
দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজনীয় শক্তি, তাপ নিরোধক এবং শরীরের অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রত্যেক মানুষের শরীরে মেদ প্রয়োজন। তবে বেশি পরিমাণে মেদ জমার কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরের চর্বি যত বেশি হবে ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ এবং অন্যান্য সমস্যা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।





কোন ব্যক্তি অতিরিক্ত ওজনযুক্ত বা স্থূলকায় কিভাবে জানবেন ?

 
বডি মাস ইনডেক্স (BMI)-এর সাহায্যে জানাযায় কোন মানুষ স্থূল কি না ? অতিরিক্ত ওজন যুক্ত বা স্থূল লোকজনদের চিহ্নিত করতে BMI হ'ল একটি দ্রুত এবং সহজ উপায়। ব্যক্তির ওজনের সাথে বর্গ উচ্চতার অনুপাতের  সাহায্যে BMI নির্নয় করা হয় ।

ফরমুলাটি  :  BMI = kg/m2

 
এখানে kg ব্যক্তির ওজন (কিলোগ্রামে), এবং m2 বর্গ মিটারে তার উচ্চতা, ডাক্তারি মতে একজন সুস্থ স্বাভাবিক (18 -- 65 বছর) মানুষের BMI 18.5 থেকে 24.9-এর মধ্যে থাকা উচিত, তবে 25.0 থেকে 29.9 এর মধ্যে BMI থাকলে বেশি ওজন এবং 30.0 বা তার ওপর BMI থাকলে তাকে স্থূল বলে বিবেচনা করা হবে ।
তবে এও জানিয়ে রাখি যে বিএমআই শরীরের মেদ অনুমান করে মাত্র । এটি সরাসরি শরীরের মেদ মাপে না।  ফলস্বরূপ বলাযায় পেশীবহুল বর্ডি বিল্ডার এবং অ্যাথলিটদের ক্ষেত্রে BMI বেশী থাকতে পারে যা তাদের শরীরের অতিরিক্ত মেদ না থাকা সত্ত্বেও বেশি ওজন হিসাবে চিহ্নিত করে।

শিশু এবং কিশোরদের ক্ষেত্র BMI





শিশু এবং কিশোরদের জন্য বিএমআই বড়দের তুলনায় আলাদাভাবে গণনা করা হয়। কারণ শিশুরা এখনও বেড়ে চলেছে এবং ছেলে ও মেয়েরা বিভিন্ন হারে বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, তাদের কাছে শিশু বা কিশোরের উচ্চতা এবং ওজনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন চার্ট থাকে।

অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা স্থূল হওয়ার কারনে যে যে সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে --

 
  • ডায়াবেটিস(Diabetes)
  • উচ্চ্ রক্তচাপ(High blood pressure)
  • হৃদরোগ(Heart disease)
  • উচ্চ কলেস্টেরল(High cholesterol)
  • স্ট্রোক(Stroke)
  • নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার(Certain types of cancer)
  • গলব্লাডার রোগ(Gallbladder disease)
  • বাত(Arthritis)
  • শ্বাসকষ্ট(Breathing problems)
  • কিডনি রোগ এবং কিডনি ব্যর্থতা(Kidney disease and kidney failure)



তবে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ওজন বেশি বা স্থূল হলে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা কিডনি রোগ এবং কিডনি ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ 


অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলত্বের কারণ কী ?

 
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি যুক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে, কারন পরিশ্রম না করে অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত খাবার খেলে এই খাবার সহজে দাহ্য হয় না ফলে তা শরীরে মেদ হিসেবে জমতে থাকে। তা ছাড়াও ওজন বৃদ্ধির কিছু কারন --


  • বেশি ফাস্টফুড খাওয়া
  • নিম্নমানের Diet / নিম্ন মানের খাদ্য গ্রহন। 
  • প্রত্যহ ব্যায়াম না করা
  • নিষ্ক্রিয় জীবনধারা (ঘন্টার পর ঘন্টা টেলিভিশন দেখা, ভিডিও গেমস খেলা, কম্পিউটারে কাজ করা, অফিসে কাজ করা, হাঁটার চেয়ে গাড়ি ব্যহার বেশি করা ইত্যাদি)
  • তাছাড়া বংশগত কারনেও ওজন বৃদ্ধি হতে পারে


অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব ?

 
বিশেষজ্ঞদের মতে হ্যাঁ সম্ভব, ওজন বেড়েগেলে কিছু সাধারন পদ্ধতি অবলম্বন করে তা হ্রাস করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ সহ বেশকিছু স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

কিভাবে অতিরিক্ত ওজন কমাবেন ?


  • প্রথমেই বলব ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং তার সাথে আলোচনা করে ওজন কমানোর জন্য একটি প্রোগ্রাম তৈরী করুন। গবেষণায় দেখাগেছে  যে উপযুক্ত ডায়েট, প্রত্যহ শরীর চর্চা বা ব্যায়াম এবং আচরনবিধির পরিবর্তন করতে পারলে অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব।
  • নিরাপদে ওজন কমানোর উপায় হল সপ্তাহে 450 গ্রাম বা এক পাউন্ড ওজন কমানো।  এটি সম্ভব উপযুক্ত ডায়েট মেনটেন্ট করে, এব্যাপারে পেশাদার ডায়েটিশিয়ানদের সাথে কথা বলে আপনার জন্য সঠিক ডায়েট চার্টটি তৈরী করে নিন।
  • নিয়মিত অনুশীলন যেমন দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, যোগাসন, সাঁতার, সাইকেল চালানো, নাচ। ওজন কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যায়াম ও তার পরিমাণ ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হয়। তারজন্য পেশাদারের সাথে কথা বলুন।
  • আপনার চলাচলের পথে ফাস্টফুডের দোকান থাকলে, লোভনীয় ফাস্টফুেডর দোকানের সামনে দিয়ে না গিয়ে অন্য পথ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন, ক্ষুধার্ত অবস্থায় কখনও শপিং করবেন না।
  • ওজন কমাতে ডায়েট, ব্যায়াম এবং আচরণের পরিবর্তন করেও অক্ষম হন তবে অনেক সময় গুরুতর স্থূলত্বের ব্যক্তিদের জন্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সার্জারি করার পরামর্শদেন চিকিতসকরা ।









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।