পৃষ্ঠা

ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য রসুন অনন্য, জেনেনিন রসুনের উপকারিতা এবং অপকারিতা


রত্যেক রান্না ঘরে রসুন এক অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ, স্বাদ ও গন্ধের জন্য আমিষ জাতীয় খাবার বিশেষ করে ডিম ও মাংস ছাড়াও বিশেষ কিছু রান্নাতে রসুন ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন কাল থেকেই রসুন ঔষধি গাছ হিসাবে পরিচিত। প্রাচীন শাস্ত্রে উল্লেখ আছে মানুষ রসুনকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে প্রচুর পরিমানে রসুন ব্যবহার করে এসেছে।


garlic



রসুনে প্রচুর পরিমাণে সালফার যৌগ থাকে থাকে যাকে অ্যালিসিন বলা হয়। এই অ্যালিসিন কেবলমাত্র কাঁচা রসুনেই পাওয়া যায়। অ্যালিসিনের নানা ঔষধি গুণ আছে। রসুনে আছে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট,  প্রোটিন তাছাড়া ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩ ও বি-৬, ফোলেট, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম আর জিঙ্ক। 

 প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা রসুনে নিম্নলিখিত খাদ্যগুণ থাকে


আর্দ্রতা ৬০.০০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেড ২১.৮০ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৩০ গ্রাম, আয়রণ ২.২০ মিলিগ্রাম, কপার ০.৬৩ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.৮৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩১০.০০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০.০০ মিলিগ্রাম, জিংক ১.৯৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৭১.০০ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০৬ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লোবিন ০.২৩ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন সি ১৩.০০ মিলিগ্রাম।


amloki



ঠান্ডা ও সর্দির ক্ষেত্রে রসুন খুবই উপকারী

 
যাদের স্থায়ীভাবে ঠান্ডা ও ফ্লুর সমস্যা আছে রসুন তাদের এটা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এক্ষেত্রে রসুন চা সবচেয়ে উপকারী। রসুন চা তৈরি করতে দুটো রসুনের কোয়া থেতো করে সাথে লবঙ্গ ফুটন্ত জলে দিন, স্বাদ অনুযায়ী আদা ও মধু যোগ করুন। আপনি ১০ মিনিটের মধ্যেই ভাল বোধ করবেন। তবে এটি শূধু ঠান্ডা নিরাময় করে না তবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায় ।

হার্টের সমস্যার সমাধানে রসুন

 
হার্টের চিকিৎসায় রসুনকে সুপারফুড বলা হয়। রসুন হাইপার-টেনশন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুন রক্তের ঘনত্বকে কমায় ও রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে হার্টও সুস্থ থাকে। রসুনে থাকা অ্যালিসিনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রতিদিন  রসুন গ্রহণ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও এটি প্রচুর উপকারী। আর জমাট বাধা রক্ত পাতলা করতেও রসুন ব্যবহার করা হয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে। 


Turmeric


ত্বক ও চুলের জন্য রসুন খুবই উপকারী

 
ফ্রি-র‍্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব ও কোলাজেনের ভাঙ্গন থেকে রসুনের উদ্দীপক বৈশিষ্ট্যগুলি আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। কোলাজেনের ভাঙনের ফলে আমাদের ত্বক বয়স্ক দেখায়। রসুন আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং-এর কাজ করে ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে।  তাছাড়া রসুন দাদরোগের মতো ছত্রাকের সংক্রমণ, ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত ত্বকে আশ্চর্যভাবে নিরাময় করে এবং একজিমার মতো  ত্বকের অসুস্থতা থেকে মুক্তি দেয়। ব্রণ শুকোতেও রসুন অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া ত্বকের সারফেসে থাকা ব্যাকটেরিয়াকেও রসুন ধ্বংস করে ও ব্রণর সম্ভাবনা কমায়।
চুল পড়া সমস্যায় আমরা সবাই পেঁয়াজের ব্যবহার সম্পর্কে জানি তবে এই সমস্যায় রসুনের কার্যকারীতা পেয়াজের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। এক কোয়া রসুনের টুকরো কেটে মাথার তালুতে ভালকরে ঘসুন। রসুনে থাকা প্রাকৃতিক তেল চুল পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।

রসুন শরীরে অনাক্রম্যতা বাড়ায়

 
রসুনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬, সেলেনিয়াম আর ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। আর রসুনের অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ থাকায় তা ভাইরাস বাহিত বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচায় ও শরীরে এইসব ক্ষতিকারক ভাইরাসের বিরুদ্ধে একধরণের অনাক্রম্যতা তৈরি করে। বিগত বহু বছর ধরে ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক এবং পরজীবী সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে রসুন।
 




যৌন শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসাবে কাজ করে রসুন

 
রসুন শুক্র ও শক্তিবর্দ্ধক হিসাবে কাজ করে। সুস্থ বীর্য তৈরিতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার। যৌন অক্ষমতার ক্ষেত্রে রসুন খুব ভালো ফল দিয়ে থাকে৷ যৌন ইচ্ছা ফিরে আনার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার খুবই কার্যকরী৷ প্রতিদিন নিয়ম করে দু’কোয়া  কাঁচা রসুন খেলে স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই যৌবন দীর্ঘস্থায়ি হয়। পড়ন্ত যৌবনে চলেগিয়েছেন এমন ব্যক্তিরা প্রতিদিন দু’কোয়া রসুন খাঁটি গাওয়া ঘি-এ ভেজে মাখন মাখিয়ে খেতে পারেন। তবে খাওয়ার শেষে একটু গরম জল বা দুধ খাওয়া উচিৎ। এতে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

অস্টিও-আরথ্রাইটিস কমাতে রসুন অব্যর্থ

 
বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে যেসমস্ত মানুষ রোজ সকালে উঠে নিয়ম করে এক বা দু’কোয়া কাঁচা রসুন খান, তাঁদের অস্টিও-আরথ্রাইটিসের সম্ভাবনা বহুগুণ হ্রাস পায়। কারণ রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য ডায়ালিল ডাই-সালফাইড নামক যৌগ থাকে, যা শরীরের কার্টিলেজকে ক্ষতিগ্রস্তকারী উৎসেচকের পরিমাণ কমায়। হাত-পায়ের হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা ও প্রদাহ কমায় ফলে রিউম্যাটয়েড আরথ্রাইটিসের রোগীরা উপকার পান।

যক্ষ্মা প্রতিরোধক

 
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে রসুনে এত উপাদান যে যক্ষ্মা বা টিবি জাতীয় সমস্যায় প্রতিদিন রসুন সেবনে এই রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব।

গাঁঠের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয় রসুন

 
যেকোরকম ব্যথায় রসুনের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন এবং ব্যথা এবং অস্বস্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। প্রতিদিন এটি ব্যবহার করলে অস্টিওপরোসিস, অস্টিওমালিয়া এবং আর্থ্রাইটিসের এর মত রোগের ব্যথাও কমতে বাধ্য।

আরও পড়ুন -  জেনেনিন সুগার কন্ট্রোলে রাখার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি 


রসুন খাওয়ার নিয়ম

 
কাঁচা রসুনে উপকারিতা অনেক গুন বেশি থাকে।
সকালে একদম খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া উচিত।
রসুনের 2-3 টি কোয়া খুলে 10-15 মিনিট রেখেদিন, তারপর জল দিয়ে খেয়ে নিন।
রসুনকে 30 মিনিটের বেশি রান্না করলে তার গুণগুলি কমে যায়।
লেবুর রসের সাথে কাঁচা রসুন খেলে ওজন কমানোর জন্য ভাল ফল পাওয়া যায়।

রসুনের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

 

  • প্রতিদিন 2-3 কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন না খাওয়াই ভালো, বেশি রসুন খেলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কাঁচা রসুন বেশি খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ফলে খুব ঘাম হয়।
  • খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। কারণ রসুনে আছে সালফার যা পেটে গ্যাস তৈরি করে এবং ডায়রিয়া হওয়ার পেছনে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।
  • মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে বেশি পরিমান রসুন না খাওয়ায় ভাল।
  • বেশি রসুন খেলে ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ঘামাচি বা শুষ্কতা দেখা যায়।
  • দুগ্ধদানকারী মায়েরা এবং গর্ভবতী মহিলারা কাঁচা রসুন খেলে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রসুন না খাওয়াই ভাল।
  • উচ্চরক্তচাপ কমানোর জন্য কাঁচা রসুন খুবই উপকারী কিন্তু অতিরিক্ত রসুন খেলে উল্টো প্রভাব দেখা দিতে পারে নিম্ন রক্তচাপ জনিত সমস্যা হয়।
  • যাদের শরীরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না তাদের কাঁচা রসুন না খাওয়াই ভালো।
  • রক্তের ঘনত্ব কমানোর প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে রসুনের ব্যবহার সর্বাধিক। তাই যারা ‘ওয়ারফারিন’ ‘অ্যাসপিরিন’ ইত্যাদি ‘ব্লাড থিনার’ ধরনের ওষুধ সেবন করেন তাদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হয়ে আভ্যন্তরীন রক্তপাত শুরু হতে পারে।
  • রসুন বেশি খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। এর প্রধান কারণ রসুনে থাকা সালফার।



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ 
 
 
 অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না যা সার্জারীর জন্য বিপদজনক, গর্ভাবস্থায় ও দুগ্ধদানকারী মাতা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কাঁচা রসুন খাবেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।