ডায়াবেটিস, তথাকথিত সুগার বর্তমানে সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এই রোগটি এখন দেখাযাচ্ছে। কেউ কেউ বলেন এটি নিরাময়যোগ্য আবার কেউ কেউ বলেছেন না। তাই আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের সম্পর্কে অল্প বিশ্লেষণ এবং অল্প গবেষণা করেছি। এটি কী, কেন হয় ? কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, কিছু ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমে সুগার কন্ট্রোলে রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি নীচে থেকে আরও বিশদ জানুন।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, মানব শরীরে অগ্ন্যাশয় যখন আর ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম হয় না, বা যখন শরীর তার উৎপাদিত ইনসুলিনের সঠিক ব্যবহার হয় না। তখনই ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি ফুটে ওঠে। ইনসুলিন হল অগ্ন্যাশয় দ্বারা তৈরি একটি হরমোন, যা আমাদের খাওয়া খাবার থেকে গ্লুকোজ রক্তের প্রবাহ থেকে শরীরের কোষগুলিতে শক্তি উৎপাদন করতে দেয়। সমস্ত কার্বোহাইড্রেট খাবারগুলি রক্তে গ্লুকোজ হিসাবে ভেঙে যায়। ইনসুলিন এই গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে সহায়তা করে যা একটি চাবির মতো কাজ করে। ইনসুলিন উৎপাদন করতে বা সটিকভাবে ব্যবহার না হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে যায় (যা হাইপারগ্লাইকাইমিয়া নামে পরিচিত) দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ গ্লুকোজ স্তরগুলি, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং টিস্যুগুলির ক্ষতি করে।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
ডায়াবেটিসের প্রধানত তিন প্রকার রয়েছে -
- টাইপ 1 ডায়াবেটিস
- টাইপ 2 ডায়াবেটিস
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
টাইপ 1 ডায়াবেটিস যে কোনও বয়সের মানুষের দেখা দিতে পারে তবে শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এটি প্রায়শই দেখাযায়। টাইপ 1 ডায়াবেটিস হলে মানবদেহ খুব কম পরিমানে বা একদমই ইনসুলিন তৈরি হয় না, যার অর্থ রক্তের গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হয়।
টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় 90% ক্ষেত্রেই টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই ধরনের ডায়াবেটিস হলে মানবদেহ যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় তার সঠিক ব্যবহার হয় না। টাইপ 2 ডায়াবেটিসের চিকিৎসার মূল ভিত্তি হল শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট সহ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। তবে সময়ের সাথে সাথে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের বেশিরভাগ লোকদের রক্তের গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওরাল ড্রাগ এবং / বা ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (জিডিএম) হল এক ধরণের ডায়াবেটিস, এই ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় রক্তে হাই গ্লুকোজ দেখা যায় ফলে মা এবং শিশু উভয়েরই রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায়। জিডিএম সাধারণত গর্ভপাতের পরে আর থাকে না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখাগেছে মায়েরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে তাদের শিশুরা পরবর্তী জীবনে টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।
কিভাবে বুঝবেন ডায়াবেটিস হয়েছে (লক্ষণ)
টাইপ 1 এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসের কয়েকটি লক্ষণগুলি- জল তৃষ্ণা বেড়ে যায়।
- ঘন ঘন মূত্রত্যাগ।
- প্রচন্ড খিদে পায়।
- ওজন কমে যায়।
- প্রস্রাবে কেটোনের উপস্থিতি (কেটোনগুলি পেশী এবং চর্বি বিভাজনের একটি উপজাত যা সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন না পাওয়া গেলে ঘটে)।
- ক্লান্তি।
- খিটখিটেভাব।
- ঝাপসা দৃষ্টি।
- কেটেগেলে সারতে দেরি।
- ওজন ওঠানামা।
- কম যৌন তাগিদ।
- ঘন ঘন সংক্রমণ যেমন দাঁতের মাড়ি বা ত্বকের সংক্রমণ এবং যোনি সংক্রমণ ইত্যাদি।
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের ফলে কি কি সমস্যা হতে পারে
- কিডনির সমস্যা
- হৃদরোগ
- ইরেক্টাইল ডিসফাংশন
- হাইপোগ্লাইসিমিয়া
- পেটের স্নায়ুর ক্ষতি
- রেটিনোপ্যাথি এবং গ্লুকোমা
- বিভিন্ন যৌন সমস্যা
- দাঁত ও মাড়ির সমস্যা
- স্নায়ুরোগ
- ডায়াবেটিক কোমা
ডায়াবেটিসের কারণগুলি
- জিনগত
- অনুপযুক্ত পুষ্টি
- অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা
- আসীন জীবনধারা
- অত্যাধিক চিন্তা
- স্টেরয়েড ড্রাগ গ্রহণ
- অ্যালকোহল ব্যবহার
- হাইপারটেনশন
- উচ্চ কলেস্টেরল
- অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া
সুগার কন্ট্রোলে আনার কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি
করলার রস ডায়াবেটিস রোগীদের করলার রস খুবই উপকারী এতে হাইপোগ্লাইকাইমিক নামক একটি জৈব রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা রক্তে থাকা হাই সুগার কমায়, টাইপ 2 এবং টাইপ 1 ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী একটি টোটকা ।
পদ্ধতি : প্রতিদিন সকালে ½ চা চামচ করলার রস এক কাপ জলে গুলে খেতে হবে।
মেথি বীজ
পদ্ধতি : প্রতিদিন সকালে ½ চা চামচ করলার রস এক কাপ জলে গুলে খেতে হবে।
মেথি বীজ
মেথি বীজে গ্যালাক্টোমানান থাকে, যা হজমের হার কমায় এবং কার্বোহাইড্রেট শোষণ করে ।
পদ্ধতি : 10 গ্রাম মেথি বীজ 1 কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে পরদিন সকালে খালি পেটে ঐ মেথি ভেজানো জল ছেকে খেতে হবে।
আমলকি
পদ্ধতি : 10 গ্রাম মেথি বীজ 1 কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে পরদিন সকালে খালি পেটে ঐ মেথি ভেজানো জল ছেকে খেতে হবে।
আমলকিতে প্রচুর পরিমানে ক্রোমিয়াম রয়েছে, যা কার্বোহাইড্রেডকে নিয়ন্ত্রিত করে এটি ইনসুলিনের পক্ষে ভাল। প্রতিদিন আমলা খেলে উচ্চ চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
পদ্ধতি:
একটি আমলকি এক কাপ জলে সেদ্ধ করে জল সমেত আমলকির জুস তৈরী করে নিয়ম করে প্রতিদিন খেতে হবে।
জাম
পদ্ধতি:
একটি আমলকি এক কাপ জলে সেদ্ধ করে জল সমেত আমলকির জুস তৈরী করে নিয়ম করে প্রতিদিন খেতে হবে।
জাম
ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে জাম খাওয়া খুবই উপকারী। সকাল-সন্ধ্যায় 4 থেকে 5টি জাম পাতা চিবিয়ে তার রস খেলে ডায়াবেটিসেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
তেজপাতা
দুপুর এবং রাতে খাওয়ার আগে তেজপাতা + হলুদ + অ্যালোভেরা জেল (½ চামচ) মিশ্রণ খেলে সুগার কমাতে উপকারী।
আম পাতা
আম পাতা
আগের দিন রাতে কয়েকটি আম পাতা এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে পরিস্রাবণ করে জলটি পান করুন, ডায়াবেটিস রোগীর পক্ষে ভাল।
হলুদের গুঁড়ো
হলুদের গুঁড়ো
মধু + হলুদ গুঁড়ো + শুকনো আমলকির গুঁড়ো মিশ্রণ ডায়াবেটিসেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য কিছু যোগাসন
- শির্শাসন
- অর্ধ মাতসয়েন্দ্রসন
- ময়ুরাসন
- ভুজঙ্গাসন
- উদদীয়ান বাঁধা
- কপালভাতি
- সূর্য নমস্কার
- তৃকোনাসন
- ধনুরাসন
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি ডায়েট চার্ট
(বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা তৈরী)
- সকাল - করলার রস
- প্রাতঃরাশ - অঙ্কুরিত ছোলা এবং আমলকির রস
- মধ্যাহ্নভোজন - রুটি, শাকসবজি, সালাড
- সন্ধ্যা - বিভিন্ন ডাল ও ভেজিটবল স্যুপ
- রাতের খাবার - রুটি, শাকসবজি এবং সালাড
এড়িয়ে চলুন
- ফাস্ট ফুড এবং জাঙ্ক খাবার
- গুড় বা চিনি এবং মিষ্টি খাবার
- ঘি এবং মাখন
- কোল্ড ড্রিংস
- বিস্কুট এবং কেক
- তৈলাক্ত খাবার এবং ভাজা
- ধূমপান
- অত্যাধিক চিন্তা
- অ্যালকোহল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
প্রয়োজনে অবশ্যই কমেন্ট করুন, দয়াকরে কোন স্প্যাম লিঙ্ক কমেন্টে দেবেন না।