সাপ শুধু নামটাই যথেষ্ট, গায়ের মধ্যে একটা শীহরণ তৈরী হয়। সরিসৃপ প্রজাতির এই প্রাণীটিকে প্রায় সারা বছরই বিশেষ করে বর্ষার সময় বেশি করে আমাদের নজরে আসে। প্রতি বছর প্রচুর মানুষ সাপের কামড়ে প্রাণ হারান। সাধারণত আমরা চারপাশে যত ধরনের সাপ দেখতে পাই তারমধ্যে গুটিকয়েক সাপের মারণ বিষ আছে, বেশির ভাগ সাপের মানুষ মারার মত বিষ নেই। গায়ের রং, শরীরের গঠন, মাথার আকৃতি, চলাচলের প্রকৃতি ইত্যাদি বেশকিছু বৈশিষ্ট থেকে আমরা সহজেই বিষধর সাপ গুলিকে সহজেই চিনে নিতে পারি। আসুন জেনে নেই এই উপমহাদেশে সর্বাধিক দেখা যায় সেই সমস্থ সাপ গুলির বৈশিষ্ট এবং গতি প্রকৃতি।
কেউটে
গায়ের রং ধুসর বা কালো। কোন কোন ক্ষেত্রে সাদা বা হলুদ ডোরা কাটা দাগ থাকে।
ফণার পেছনে একটি চোখের মতো চিহ্ন আছে।
সাধারণত রাতে বের হয়।
জলা জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। কৃষিজমি ও মজুত খাদ্যশস্যের কাছে এদের দেখা যায়।
এরা ইঁদুর, ব্যাঙ, মাছ ও ছোট সাপ খায়।
কেউটে সাপের অন্যান্য নাম - গেঁড়ি ভাঙা, শামুক ভাঙা, তপ ইত্যাদি।
সাপটি বিষধর।
শাঁখামুটি
দেহ ত্রিকোনাকার। লেজ ভোঁতা।
উজ্জ্বল হলুদ ও কালো চওড়া ডোরা কাটা দাগ থাকে।
সাধারণত রাতে বের হয়, খোলা জায়গায় চলাফেরা করে।
খুব শান্ত প্রকৃতির, খুবই কম কামড়ায়।
এরা কালাচ ও চন্দ্রবোড়া সাপদের খেয় নেয়. তাই শাঁখামুটি
থাকলে সেখানে কালাচ ও চন্দ্রবোড়া কম দেখা যায়।
সাপটি বিষধর।
আরও পড়ুন - বাড়ি আরশোলা মুক্ত করার ১০ টি ঘরোয়া পদ্ধতি
বেত আছড়া

দেহ লম্বা এবং সরু। শরীরের দুদিকে গাঢ় বাদামী বা কালো ছোপ ছোপ থাকে, শরীরে পেছনের রং তামাটে বা কালচে বাদামী।
গাছের ওপর, কাঁটা ঝোপ, সোজা দেওয়ালে এরা সহজেই উঠতে পারে।
সাধারণত দিনের বেলাতে দেখা যায়।
খুব দ্রুত চলাফেরা করে, একটু ভিতু স্বভাবের।
ব্যাঙ, টিকটিকি পাখির বাচ্চা, এবং পিঁপড়ের ডিম খায়।
সাপটি বিষহীণ।
দুধরাজ

দেহ লম্বা ও সরু, রং তামাটে।
ঘাড়ের কাছে দুটো কালো এবং সারা দেহে ডোরাকাটা দাগ আছে। দেহের পেছনের দিকে দুটি গাঢ় বাদামী বা কালো দাগ লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত।
উইয়ের ঢিবি বা পাথরের খাঁজে দেখা যায়।
উত্তেজিত হলে ইংরেজি এস অক্ষরের মতো দেহ পেঁচিয়ে কমড়াতে আসে।
প্রধান খাবার - ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি, কাঠবেড়ালি ও অন্যান্য ছোট সাপ।
সাপটি বিষহীণ।
গোখুরা বা গোখরো
রং
বাদামী, ফণাযুক্ত, ফনার পেছনে গরুর খুরের মতো চিহ্ন দেখে সহজে চেনা যায়।
উত্তেজিত হলে ফণা তুলে হিস্ হিস্ শব্দ করে এবং জোড়ে আঘাত করে।
কৃষিজমি ও বাড়িতে মজুত রাখা খাদ্যশস্যের কাছে এদের বাশি দেখা যায়।
সাধারণত রাতে বের হয়, দ্রুত চলাফরা করে।
প্রাধান খাবার - ইঁদুর, ব্যাঙ, পাখি ও অন্যান্য ছোট সাপ।
অন্যান্য নাম - খরিস, দুধে খরিস, পদ্ম বা তেতুলে খরিস ইত্যাদি।
সাপটি বিষধর।
আরও পড়ুন - রাস্তায় কুকুর তাড়া করেছে ? কি করবেন ?
পুঁয়ে সাপ
আকৃতিতে খুবই ছোট, অনেকটা বড় সাইজের কেঁচোর মত।
চোখে দেখতে পায়না।
চকচকে বাদামী বা কালো রঙের হয়।
গর্তে থাকে এবং জীবনের বেশিরভাগ সময়তেই ভেজা স্যাতস্যাতে মাটি বা ভারী বস্তুর নীচে থাকে।
প্রধান খাদ্য - পিঁপড়ে এবং ছোট পোকা।
সাপটি বিষহীন।
চন্দ্রবোড়া
রং
হলদেটে বা বাদামী যার ওপর গাঢ় বাদামী বা চকলেট কালারের চাকা চাকা দাগ থাকে। দেহ মোটা।
মাথা তিন কোনা এবং ঘাড়ের থেকে চওড়া।
ঝোপ ঝাড়, পাতার স্তুপ, ইঁটের স্তুপ, কৃষি জমির আশেপাশে এদের দেখা যায়।
প্রধান খাদ্য ইঁদুর ও ব্যাঙ।
ধীর গতিতে চলাফেরা করে কিন্তু প্রবল বেগে আঘাত করতে পারে।
উত্তেজিত হলে কুকারের সিটির মত হিস হিস শব্দ করে।
কামড়ালে দ্রুত চিকিতসার প্রয়োজন।
সাপটি তীব্র বিষযুক্ত।
লাউডগা
লাউগাছের ডগার মতো সরু পাতলা লিকলিকে, রং সবুজ. মাথাটা তীরের ফলার মতো।
দিনের বেলায় গাছের ডালে বা ঝোপে দেখা যায়।
গাছে থাকে বলে সাধারণত মাথায় বা মুখে কামড় দেয়।
প্রধান খাদ্য -- টিকটিকি, ব্যাঙ, ছোট পাখি ও ইঁদুর।
বিষ খুবই ক্ষীণ, শিকারকে নিস্তেজ করে গিলতে সাহায্য করে।
এই
সাপের বিষ মানুষের কোন ক্ষতি করে না।
আরও পড়ুন - বিয়ের আগে কি কি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী
মেটেলি
দেহ মোটা, রং জলপাই, ধুসর বা বাদামী। আঁশ মসৃণ।
দিনের বেলায় দেখা যায়।
সাধারণত জলে বা ডোবায় থাকে।
প্রধান খাদ্য -- মাছ, টিকটিকি, ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি।
সহজে কামড়ায় না। তবে কামড়ালে আঘাতের জায়গা ফুলে যায় এবং কিছুক্ষণ দপ দপ করে।
এই সাপের বিষ মারাত্মক নয়।
কালনাগিনী
দেহ লম্বাটে ও সরু।
বহু রং বিশিষ্ট, দেখতে সুন্দর।
দিনের বেলায় গাছের ডালে বা ঝোপে দেখা যায়।
উড়তে পারে না, তবে হাওয়ার সাথে ভেসে প্রায় 100 মিটার পর্যন্ত লাফাতে পারে।
প্রধান খাদ্য ব্যাঙ, টিকটিকি, ছোট পাখি ও বাদুর।
ক্ষীণবিষ শিকারকে নিস্তেজ করে গিলতে সাহায্য করে।
এই
সাপের বিষে মানুষের মৃত্যু হয় না।
ঘরচিতি
রং
বাদামী। গায়ে সাদা বা হলুদ রঙের চওড়া দাগ থাকে, দাগগুলি শরীরের সামনের দিকে স্পষ্ট
ঘাড়ের কাছে সাদা বা হলদেটে রঙের হয়. ঘাড়ে থেকে মাথা চওড়া।
প্রধান খাদ্য টিকটিকি ও ব্যাঙ।
সন্ধ্যার পর বাড়ির মধ্যে দেখা যায়. উত্তেজিত করলে কামড়ে দায়।
অনেকে এই সাপটিকে কালচিতি ভেবে ভুল করে।
সাপটি বিষহীণ।
জলঢোঁড়া
রং
হলুদের ওপর কালো ছোপ।
জলাশয়, নর্দমা, পুকুর বা ডোবার জলে এদের দেখা যায়।
বিরক্ত করলে কামড় দেয়।
প্রধান খাদ্য জলের পোকা, মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি।
সাপটি বিষহীণ।
আরও পড়ুন - ভেলোরে চিকিৎসা করাতে চান, জেনে রাখুন ভেলোর সম্বন্ধে বিস্তারিত খুঁটিনাটি
তুতুর
দেহ মোটা এবং ছোট. লেজ ছুঁচালো।
শরীরে বাদামী বা কালো বড়ো অসম্পূর্ণ চাকা দাগ থাকে।
কৃষি জমি, বাগান ইত্যাদি জায়গায় বেশি দেখা যায়।
খুব অলস প্রকৃতির, আস্তে চলাফরা করে। উত্তেজিত হলে আক্রমন করে।
প্রধান খাদ্য পোকামাকড়, টিকটিকি, ছোট সাপ, পাখি ও ইঁদুর।
অনেকে একে ফুরসা, চন্দ্রবোড়া বা ময়াল সাপ ভেবে ভুল করে।
সাপটি বিষহীণ।
হেলে
দেহ সরু, রঙ হালকা বাদামী বা হলুদ, শরীরের ওপর দুটি হলুদ ফুতের মতো দাগ গলা থেক লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত।
প্রধান খাদ্য
ব্যাঙ, ইঁদুর, টিকটিক ও পোকামাকড়।
মাঠ, স্যাতসেতে জায়গা বা জলাশয়, ঝোপ ঝাড়, বাগানে দেখা যায়।
এদের দিনের বেলাতে দেখা যায়।
শান্ত স্বভাবের।
সাপটি বিষহীণ।
উদয়কাল
রং
হালকা বাদামী, পিঠের ওপর স্পষ্ট কালো বা গাঢ় বাদামী রঙের চাকা চাকা দাগ আছে।
মাথায় তিনটি তিরের মতো চিহ্ন আছে।
সন্ধ্যায় এবং রাতে বের হয়।
ইঁট বা পাথরের স্তুপ, গাছের গুঁড়ি বা পুরানো বাড়িতে দেখা যায়, খুব শান্ত স্বভাবের।
প্রধান খাবার টিকটিকি, ইঁদুর, সরীসৃপের ডিম ও পোকামাকড়।
সাপটি বিষহীণ।
কালাচ
রং
কালো, ঘাড়ের নীচ থেকে লেজ পর্যন্ত সারা শরীরে সরু চুড়ির মতো সাদা দাগ থাকে।
মুলত রাতে বের হয়।
সাপটি তীব্র বিষযুক্ত। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম বিষধর সাপ এটি।
এই
সাপের কামড় ১০০ শতাংশ বিপজ্জন কামড়ের জায়গাটা অসাড় হয়ে যায়, ফলে জ্বালা বা যন্ত্রনা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কামড়ে কোন দাগও থাকে না।
সময় মত এভিএস (সাপে কামড়ের ওষুধ) না দিলে মৃত্যু অনিবার্য।
কালচিতি, জোমনা চিতি, ডোমনা বোড়া, শিয়র চাঁদা বা শংখচিতি নামেও পরিচিত।